সত্যিকারের ভালোবাসার মূল্য সবাই দিতে জানেনা। (পর্ব- ২)


পরের দিন বিকালে রাশেদ রিয়াকে পড়াতে যায়।পড়ার টেবিলে রাশেদ রিয়ার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকে। রাশেদ জানতে চায় কিভাবে সে তার সাথে কথা না বলে থাকতে পারলো? । সে তো তাকে ছাড়া থাকতে অনেক কষ্ট হয়েছে।তার কথা ভেবে প্রতিরাতে কান্না করে বালিশ ভিজিয়েছে।  রিয়া বারবার রাশেদকে অনুরোধ করে আস্তে কথা বলতে কারন ভিতর থেকে তার আম্মু শুনে ফেলতে পারে সেই ভয়ে। রিয়া বারবার রাশেদকে সরি বলে এবং বলে যে তার ভুল হয়ে গেছে দয়া করে আস্তে কথা বলেন আম্মু শুনে ফেলবে। কিন্তু রাশেদের মনে অনেক রাগ-ক্ষোভ জমা ছিলো তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে নি।এদিকে রিয়ার আম্মু ভিতর থেকে সব শুনে ফেলে। পরে রিয়ার আম্মু রাশেদকে তেমন কিছু বলে না শুধু এইটুকু বলে যে দেখো বাবা তোমারও মানসম্মান আছে আমাদেরও আছে তবে এমন কিছু করো না যাতে উভয়ের সম্মানহানি হয়। এরপর 2 দিন রাশেদ রিয়াকে পড়াতে যায় না। পরে রিয়ার আম্মু ফোন দেয় কেনো পড়াতে যায় না জানার জন্য। রাশেদ তখন বলে কাজ ছিলো তাই যায় নি। পরদিন থেকে আবার রাশেদ রিয়াকে পড়াতে যায়।  

     রাশেদ রিয়াকে অনেক বেশি ভালোবাসে। রাশেদ চায় রিয়াকে এখনই বিয়ে করতে। রাশেদ কোনো কাজেই মন বসাতে পারে না। কারন তার মন রিয়ার কাছে পড়ে থাকে। রাশেদ রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনা। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও করে না। আস্তে আস্তে রাশেদের বড় বোন রাশেদের আনমনা অবস্থার কথা জেনে যায়। তার এ অবস্হা কেনো জানতে চায়। পরবর্তীতে সব ঘটনা জানতে পারে। রাশেদের পরিবার একদমই চায় না রিয়ার সাথে রাশেদের বিয়ে হোক। কিন্তু রাশেদের বাজে অবস্হা দেখে তার বড় বোন বলে তাহলে আমি রিয়ার আম্মুর কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাই? । কিন্তু রাশেদ বলে না তুমি কেনো ছোট হবা। তারপরও রাশেদের কথা ভেবে তার বড় বোন রিয়ার আম্মুর কাছে যায়।রাশেদের পরিবার যে খুবই ভালো সেটা রিয়ার আম্মু বেশ ভালো করে জানেন। যদিও রিয়ার বিয়ের বয়স হয়নি তারপরও রিয়ার আম্মু রাশেদের বোনকে জানায় যেহেতু তাদের প্রথম মেয়ের বিয়ে এজন্য সবকিছু গোছানোর জন্য কিছু সময়ের প্রয়োজন।  তাই তিনি বলেন আমাদের ছয় মাস সময় দেয়া লাগবে তারপর বিয়ে হবে।

     মোটামুটি এখন রাশেদ রিয়ার বিয়ে ঠিক।  কিন্তু এদিকে রাশেদ এখন রিয়াকে পড়াতে যেতে লজ্জা পায়।রিয়ার আম্মু রাশেদকে ফোন দেয় তারপর রাশেদ রিয়াকে পড়াতে যায়। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো কিন্তু এরই মাঝে এসে যায় মহামারি করোনা ভাইরাস। করোনার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে রাশেদেরও রিয়াকে পড়ানো বন্ধ হয়ে যায়। এখন যেহেতু বিয়ের কথা ঠিকঠাক তাই মাঝে মধ্যেই রিয়া রাশেদের সাথে ফোনে কথা বলে। এরকম অনেকদিন চলতে থাকে। কিন্তু কিছুদিন পর আবার কেমন যেনো সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। রিয়ার কোনো খবর নাই। রিয়ার আম্মুও রাশেদের কোনো খোঁজ খবর নেয় না। প্রায় দু'মাস রিয়ার পরিবারের সাথে রাশেদের কোনো যোগাযোগ নাই। রাশেদ এখন নিজেকে অনেক বুঝিয়েছে। সে ভাবে যাকে সে এতো ভালোবাসে সে যখন তার কোনো খবরই রাখে না তার জন্য কষ্ট পাওয়ার কোনো মানেই হয় না। রাশেদ বুঝতে পারে না কেনো রিয়া তার সাথে কথা বলে না অথচ তাদের বিয়ের কথাবার্তা ঠিক। নাকি রিয়া তাকে ভালোই বাসে না?। কষ্ট পেতে পেতে রাশেদের মনটি পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে। যে মেয়ে তাকে এতো কষ্ট দিতে পারে তাকে সে এখন আর চায় না। এখন মাঝে মধ্যে রিয়ার আম্মু রাশেদকে ফোন দেয় তাদের বাসায় যেতে বলে। কিন্তু রাশেদ যায় না। প্রায় সময়ই রাশেদ সে বাসা থেকে কেউ ফোন দিলে রিসিভ করে না।সে চায় না কথা বলে মায়ায় জড়িয়ে আবার কষ্ট পাক। 

     একমাত্র আল্লাহই জানে রাশেদের কপালে কি আছে। সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে রাশেদ কি তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাবে? সেটা সময়ই বলে দিবে। আপাতত এইটুকু বলা যায় যে রিয়া রাশেদের সত্যিকারের ভালোবাসাটা বুঝতে পারে নি। যদি বুঝতে পারতো তাহলে কখনোই রাশেদকে কষ্ট দিতে পারতো না। আমরা চাই রাশেদ- রিয়ার মধ্যে সকল সমস্যার সমাধান হোক এবং সত্যিকারের ভালোবাসার জয় হোক। 



             ***** সমাপ্ত *******

Comments

Post a Comment