কোরবানি দেয়ার মূল লক্ষ্যই থাকতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা, মাংস খাওয়া নয়। মাংস আমরা সব সময়ই খেতে পারি কিন্তু কোরবানি আসে বছরে একবার। এবার আসুন কোরবানিটা কিভাবে আসলো সে ব্যাপারে একটু আলোচনা করি। কোরবানি হলো আমাদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর সুন্নত। আমরা সবাই কম বেশি ইব্রাহিম (আ:) এবং ইসমাইল (আঃ) এর ঘটনা জানি। তারপরও একটু বলি। আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে তাঁর নবুয়তি জীবনে অনেকগুলো পরীক্ষা করেছেন তার মধ্যে প্রাণপ্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করার পরীক্ষাটা অন্যতম। আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে ৮৬ বছর বয়সে একটি পুত্র সন্তান দান করেন এবং ইসমাইলের জন্মের পরই আল্লাহ তায়ালা ইব্রাহিম (আঃ) কে হুকুম করেন বিবি হাজেরা এবং শিশু সন্তান ইসমাইলকে জনমানবহীন নির্জন এলাকায় রেখে আসতে। আল্লাহর নির্দেশ পাওয়া মাত্রই কলিজার টুকরা পুত্রসহ বিবি হাজেরাকে তিনি নির্জন জায়গায় রেখে আসেন। সেখানে কোনো পানির ব্যবস্হা ছিলো না। খাবারের কোনো ব্যবস্হা ছিলো না। কিন্তু যারা আল্লাহর হুকুম পালন করতে যায় আল্লাহ তাদের না খাইয়ে মারেননা।অবশেষে আল্লাহর রহমতে ইসমাইলের পায়ের আঘাতে সেখানে জমজম কূপ সৃষ্টি হয়ে যায়। যাহোক যখন ইসমাইল (আঃ) দৌড়াদৌড়ি করা শুরু করলেন।তখন একদিন ইব্রাহিম (আঃ) স্বপ্নে দেখলেন যে আল্লাহ বলতেছেন হে ইব্রাহিম তোমার প্রিয় বস্তু কোরবানি করো। পরদিন ইব্রাহিম (আঃ) ১০০ দুম্বা কোরবানি করে দিলেন।রাতে আবার স্বপ্নে দেখলেন প্রিয় বস্তু কোরবানি করো। তিনি এবার 100 উট কোরবানি করলেন।আবার স্বপ্নে দেখলেন প্রিয় বস্তু কোরবানি করো। এবার তিনি বুঝতে পারলেন যে তাঁর প্রিয় বস্তু তো ইসমাইল। এর মানে হলো তাকে প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করতে বলা হচ্ছে।
এরপর ইব্রাহিম (আঃ) স্বীয় পুত্র ইসমাইলকে বললো " হে আমার প্রিয় পুত্র আমি স্বপ্নে দেখলাম তোমাকে জবাই করছি এ ব্যাপারে তোমার মতামত কি?"
ইসমাইল (আঃ) যেহেতু নবীপুত্র তিনি জানতেন যে নবীদের স্বপ্নও ওহী।তখন ইসমাইল বললো "হে আমার পিতা আপনাকে যা নির্দেশ করা হয়েছে তা পালন করুন আল্লাহ চাহেন তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত দেখতে পাবেন"।
এরপর ইব্রাহিম (আঃ) ইসমাইলকে নিয়ে যায় কোরবানি দেয়ার জন্য। যখন ইসমাইলকে মাটিতে শুইয়ে দিয়েছেন জবাই করার জন্য তখন ইসমাইল বলে বাবা চোখ খোলা থাকলে আপনি আমাকে হয়তো মায়ায় জবাই করতে পারবেননা কাজেই চোখগুলো বেঁধে নেন।যখন ইব্রাহিম (আঃ) চোখ বেঁধে ইসমাইলের গলায় ছুরি চালাবেন তখন আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাঈল (আঃ) কে বললেন দ্রুত জান্নাত থেকে একটা দুম্বা নিয়ে যেতে।তখন ইব্রাহিম (আঃ) এর ছুরির নিচ থেকে ইসমাইলকে সরিয়ে তার জায়গায় দুম্বাটি শুইয়ে দেয় এবং ইসমাইলের পরিবর্তে দুম্বাটি কোরবানি হয়ে যায়। এখান থেকেই কোরবানির প্রচলন শুরু হয় এবং কেয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।
***যেসব পশু দিয়ে কোরবানি করতে হবে-****
১/ গরু - মহিষ (2 বছর বয়সী হতে হবে)
২/ ছাগল, ভেড়া এবং দুম্বা (১ বছর বয়সী হতে হবে তবে ৬ মাসের বাচ্চা একবছরের মতো মোটাতাজা হলে দেয়া যাবে সমস্যা নাই)
৩/ উট (৫ বছর বয়সি হতে হবে)।
কোরবানির পশুটা অবশ্যই দেখে শুনে ভালো দেখে কিনতে হবে। যেহেতু এই পশুটাই পুলসিরাতে আপনার সওয়ারি হবে সেহেতু এটা মোটাতাজা দেখে কিনতে হবে। রাসূল (সঃ) বলেছেন " তোমরা তোমাদের কোরকানির পশুটি মোটাতাজা দেখে কিনো".
**কোন পশু দ্বারা কতো নামে কোরবানি দেয়া যাবে?**
ছাগল, দুম্বা, এবং ভেড়া দিয়ে এক নামে কোরবানি দেয়া যাবে। গরু, মহিষ, উট দ্বারা ১ থেকে ৭ নাম পর্যন্ত কোরবানি দেয়া যাবে।জোড় বিজোড় কোনো শর্ত নয়।
কোরবানি যেহেতু খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সেহেতু খুবই সতর্কতার সাথে এটা আদায় করতে হবে। সামান্য ভুলের কারনে আপনাদের কোরবানি কবুল নাও হতে পারে। এজন্য তাকওয়াবান লোকদেরকে সাথে নিয়ে কোরবানি দিতে হবে। আপনি আরো ৬ জনের সাথে কোরবানি দিলেন তাদের মধ্যে একজনের সমস্যা আছে যেমন নামায পড়েনা, সুদ খায়, মিথ্যা কথা বলে ইত্যাদি তার তো কোরবানি হবেই না সাথে আপনাদেরটাও হবে না। এজন্য ভালো দেখে ভাগিদার নিতে হবে।
কোরবানি এমন একটা ইবাদত যেটা সবার জন্য ওয়াজিব নয়। যাদের যাকাত এবং ফিতরা দেয়ার সামর্থ্য আছে কেবল তাদের উপরই কোরবানি ওয়াজিব। আর কোরবানিকৃত পশুর মাংসে গরীবেরও হক আছে।যারা কোরবানি দিবে তারাই শুধু মাংস খাবে অন্যরা না খেয়ে থাকবে তা হবে না। ইসলাম এটা সমর্থন করে না। ইসলামে ধনী গরিব সবাই সমান। কোরবানি যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দেয়া হয় সেহেতু প্রয়োজনের বাহিরে মাংস ফ্রিজে না রেখে অবশ্যই তা অসহায় মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে। আপনি মজা করে মাংস খাবেন আর আপনার অসহায় প্রতিবেশী না খেয়ে থাকবে এটা ইসলাম কখনোই মেনে নিবে না।
তাই আসুন আমরা সঠিক নিয়মে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য পবিত্র পশু কোরবানি করি, মাংস খাওয়ার জন্য নয়। আর যারা কোরবানি দিবেন তাদের নিকট আকুল আবেদন মাংস ফ্রিজ ভর্তি করে রাখবেননা (প্রয়োজন মতো ব্যতীত) এতে অসহায় গরীব মানুষের হক রয়েছে। যতটুকু সম্ভব অসহায় মানুষদের মাঝে মাংস বিলিয়ে দিন যাতে তারা অন্তত একটা দিন মজা করে খেতে পারে। আমাদের কোরবানি হোক ত্যাগের জন্য ভোগের জন্য নয়। আল্লাহ আমাদের সকলের কোরবানি কবুল করুক (আমীন)
Comments
Post a Comment